জিঙ্গা কোল্ড ফিল্ম গ্যালভানাইজিং সিস্টেমের প্রযুক্তিগত প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
জিঙ্গা কোল্ড ফিল্ম গ্যালভানাইজিং করার পদ্ধতিঃ
জিঙ্গা ফিল্ম গ্যালভানাইজিং করার জন্য সার্ফেস প্রিপারেশন করা খুবই জরুরী। সার্ফেস প্রিপারেশনের উপর জিঙ্গার কার্যক্ষমতা নির্ভর করে। প্রোফাইল সঠিকভাবে না হলে অনেক ক্ষেত্রে জিঙ্গার প্রয়োগ ব্যর্থ হতে পারে। জিঙ্গা যদি ধাতু পৃষ্ঠের (Metal Surface) সাথে সরাসরি সংযোগ না থাকে বা অন্য কোনো পদার্থ যেমনঃ মরিচা, তৈলাক্ত পদার্থ, লবনাক্ত পদার্থ, ধুলাবালি বা অন্য যে কোনো ডাস্ট বা ধুলা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেক্ষেত্রে জিঙ্গার সাথে ধাতুর ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সংযোগ ব্যহত হবে এবং ক্যাথোডিক প্রটেক্টশনে ব্যর্থ হবে। এজন্য সার্ফেস প্রিপারেশনকে এর চাবিকাঠি বলা হয়।
সার্ফেস প্রিপারেশন এর ক্ষেত্রে জিঙ্গার স্ট্যান্ডার্ড রিকয়ারমেণ্ট অনুযায়ী সার্ফেসকে অবশ্যই SA 2.5 মানে ক্লিননেস করতে হবে, যার রাফনেস গভিরতার মান হবে Rz 25µ থেকে 35µ।
জিঙ্গা অ্যাপ্লিকেশনের ধাপসমূহঃ
i সার্ফেসকে মরিচামুক্ত, তৈলাক্ত পদার্থমুক্ত, লবনাক্ত পদার্থমুক্ত এবং ধুলাবালিমুক্তকরণ
ii ক্লিননেসঃ SA 2.5 স্ট্যান্ডার্ড (ISO 8501-1:2007 অনুসারে)
iii রাফনেসঃ Rz 25µ থেকে 35µ (ISO 8503 -2 :2012 অনুসারে)
iv ওয়াশ এবং সল্ভেন্ট ক্লিন
v জিঙ্গা মিক্সিং
vi ১ম কোট জিঙ্গা অ্যাপ্লিকেশন
vii ২য় কোট জিঙ্গা অ্যাপ্লিকেশন
viii টপকোট (ঐচ্ছিক)
সার্ফেস প্রিপারেশন পদ্ধতিঃ
১। স্যান্ডব্লাস্টিং বা শটব্লাস্টিং পদ্ধতিঃ জিঙ্গা অ্যাপলিকেশন এর ক্ষেত্রে Bvba Zingametall Sprl, Belgium সবসময় স্যান্ডব্লাস্টিং বা শটব্লাস্টিং এর মাধ্যমে সার্ফেস ক্লিন করার জন্য রেফার করে। সার্ফেস স্ট্রাকচার অনুযায়ী প্রজেক্ট সাইটে যদি স্যান্ডব্লাস্টিং বা শটব্লাস্টিং করার সুযোগ থাকে, তাহলে স্যান্ডব্লাস্টিং বা শটব্লাস্টিং এর মাধ্যমে জিঙ্গার স্ট্যান্ডার্ড রিকয়ারমেণ্ট অনুযায়ী SA 2.5 মানের সার্ফেস প্রিপারেশন করতে হবে, যার রাফনেস গভিরতার মান হবে Rz 25µ থেকে 35µ।
২। ডিটারজেন্ট ক্লিন বা সল্ভেন্ট ক্লিন পদ্ধতিঃ যদি সার্ফেস মরিচামুক্ত থাকে, তাহলে সার্ফেসকে তৈলাক্ত এবং অন্যান্য ধুলা বা ডাস্ট থেকে মুক্ত করার জন্য ডিটারজেন্ট পাউডার বা শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ওয়াশ বা ধৌত করতে হবে বা সল্ভেন্ট দিয়ে ক্লিন (Solvant Cleen) করতে হবে।
৩। সাধারন বা প্রচলিত পদ্ধতিঃ (কম সার্ফেস এরিয়া অথবা যদি ব্লাস্টিং করার সুযোগ না থাকে)
i ইমারিক্লথ বা স্যান্ডপেপারঃসার্ফেস যদি মরিচাযুক্ত থাকে তাহলে সার্ফেস কে মরিচামুক্ত করার জন্য স্যান্ডপেপার বা ইমারিক্লথ এর মাধ্যমে সার্ফেস ক্লিন করতে হবে। এক্ষেত্রে ৮০ গ্রেড এর ইমারিপেপার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
ii স্টিল ওয়্যার কাপব্রাশ এবং গোল্ডেন ওয়্যার কাপব্রাশঃ সার্ফেসে মরিচা বা অন্যান্য ডাস্ট বা ধুলা থাকলে গ্রাইন্ডিং মেশিনে স্টিল কাপব্রাশ বা গোল্ডেন কাপব্রাশ দিয়ে সার্ফেসকে মরিচামুক্ত করতে হবে। সাধারণত সমতল সার্ফেসে স্টিল কাপব্রাশ এবং নাট, বোল্ট বা অন্যান্য ক্রিটিক্যাল যায়গায় গোল্ডেন কাপব্রাশ ব্যবহার করা হয়।
iii ফ্লাপডিস্ক বা স্টোনডিস্কঃ সার্ফেস যদি হেবিরাস্ট থাকে তাহলে গ্রাইন্ডিং মেশিনে ফ্লাপডিস্ক বা স্টোনডিস্ক দিয়ে গ্রাইন্ডিং করে সার্ফেসকে SA-2.5 পর্যন্ত পরিষ্কার করতে হবে।
iv পেইন্ট রিমুভারঃ স্টিল বা মেটাল সার্ফেসে যদি পূর্বে করা কোন পেইন্ট বা রঙ থাকে, তাহলে পেইন্ট রিমুভার বা বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে পূর্বের রঙ উঠানো যেতে পারে। পেইন্ট পুরোপুরিভাবে উঠানোর পরে প্রচলিত পদ্ধতিতে সার্ফেস প্রিপারেশন করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরণের বা ব্র্যান্ডের পেইন্ট রিমুভার বা কেমিক্যাল পাওয়া যায়, তবে সবগুলিই কিন্তু এই কাজের উপযুক্ত নয়। আমরা আমাদের বিভিন্ন কাজে “BOSNY” ব্র্যান্ড এর পেইন্ট রিমুভার ব্যবহার করে সন্তুষ্টি পেয়েছি এবং এটাকেই আমাদের কাজের উপযুক্ত মনে করি।
রাফনেস বা প্রোফাইল তৈরিঃ
সার্ফেস প্রিপারেশনের ২য় এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো প্রোফাইল তৈরি করা। সার্ফেস মরিচামুক্ত হলে সার্ফেসকে রাফনেস করে জিঙ্গা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করতে হবে। সঠিক রাফনেস এর প্রোফাইল গভীরতার মান Rz 25µ থেকে 35µ এর মধ্যে হতে হবে এবং প্রোফাইল রাফনেস Ra 12.5 থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে গ্রাইন্ডিং মেশিনে ফ্লাপ ডিস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও ওয়ার্কপ্লেস এবং সার্ফেসের অবস্থার উপর ভিত্তি করে সার্ফেস প্রিপারেশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের টুলস ব্যবহার করা যেতে পারে।
সার্ফেস প্রোফাইল হয়ে গেলে সার্ফেসকে তৈলাক্ত এবং অন্যান্য ডাস্ট বা ধুলা থেকে মুক্ত করার জন্য ওয়াশ করতে হবে। তারপর সার্ফেস ভালোভাবে শুকিয়ে জিঙ্গা অ্যাপ্লিকেশান করতে হবে। জিঙ্গা অ্যাপ্লিকেশান এর পূর্বে যেকোনো থিনার দিয়ে সার্ফেসকে পূনরায় পরিষ্কার করে নিতে হবে। ছোট বা কম সার্ফেসের ক্ষেত্রে জিঙ্গাসল্ভ ব্যবহার করা যেতে পারে। পুরাপুরিভাবে সার্ফেস প্রিপারেশন হয়ে গেলে বেশী সময় না নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব জিঙ্গা অ্যাপলিকেশন করতে হবে।
জিংগা অ্যাপলিকেশনঃ
জিঙ্গার সাথে ১০%-২০% হারে জিঙ্গাসল্ভ মিশিয়ে ভালোভাবে মিক্স করতে হবে। তারপর ব্রাশ দিয়ে প্রথম কোট জিঙ্গা দিতে হবে। প্রথম কোট জিংগা ৩০ মাইক্রোনের বেশি থিকনেস দেওয়া উচিত নয়। প্রথম কোট এর থিকনেস যদি ২০ মাইক্রোনের কম হয়, তাহলে বুঝতে হবে জিঙ্গাতে জিঙ্গাসল্ভ এর পরিমান বেশী হয়েছে। যদি জিঙ্গাসল্ভ এর পরিমান বেশী হয়, তাহলে অল্প পরিমান জিঙ্গা মিশিয়ে অথবা কিছুক্ষন নাড়িয়ে মিক্সিং করলে সল্ভেন্টের পরিমান হ্রাস পাবে। প্রথম কোট জিঙ্গা অবশ্যই ব্রাশ দিয়ে দিতে হবে। ২য় কোটের ক্ষেত্রে ব্রাশ বা রোলার যেকোনোটি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রথম কোট জিঙ্গা দেওয়ার ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পরে ২য় কোট এবং পর্যায়ক্রমে পরিমান মতো জিঙ্গা কোটিং দিতে হবে।
টপকোটঃ
জিঙ্গা দেওয়ার মিনিমাম ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পরে টপকোট হিসেবে Polyurethane (PU) বা Enamel বা Epoxy অথবা অন্য যেকোনো টপকোট পেইন্ট দেয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সেটা জিঙ্গার সাথে বন্ডিং হয় নাকি, সেটা পূর্বে চেক করে নিতে হবে। টপকোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বাবলস দূর করার জন্য সাধারনত মিস্টকোট/ফুলকোট টেকনিক ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে মিস্টকোট দিতে হবে যা ২৫ থেকে ৩০ মাইক্রোন এর বেশি নয়। মিস্টকোট দেওয়ার মিনিমাম ২ ঘন্টা পরে ফাইনাল কোট দিতে।
হট ডিপ গ্যালভানাইজিং বা পুর্বের গ্যালভানাইজড করা সার্ফেসে জিঙ্গা অ্যাপ্লিকেশানঃ
১। প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে যে, সার্ফেসে কোনো ধরনের রাস্ট বা মরিচা আছে কিনা। যদি থাকে, তাহলে স্যান্ডপেপার বা কাপব্রাশ দিয়ে তা রিমুভ করতে হবে।
২। যদি মরিচা না থাকে, তাহলে শুধু সাবানপানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে।
৩।কোটিং থিকনেস গেজ দিয়ে পূর্বের করা গ্যালভানাইজড থিকনেস মেপে নিতে হবে এবং রেকর্ড রাখতে হবে।
৪। তারপর ব্রাশ দিয়ে প্রথম কোট জিঙ্গা দিতে হবে। প্রথম কোট জিংগা ৩০ মাইক্রোনের বেশি থিকনেস দেওয়া উচিত নয়।
৫।জিঙ্গা শুকিয়ে যাওয়ার ১ থেকে ২ ঘন্টা পরে ২য় কোট এবং পর্যায়ক্রমে পরিমান মতো জিঙ্গা কোটিং দিতে হবে।
৬।জিঙ্গা ফাইনালকোট শুকানোর ৬ ঘন্টা পরে টপকোট দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে মিস্টকোট এবং ফুলকোট পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।